Adsence

সি.পি.আর – অচেতন বা অজ্ঞান অবস্থার চিকিৎসা। CPR – Treatment Of Unconscious Conditions

সি.পি.আর(CPR) হল কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন(Cardio-Pulmonary Resuscitation)  জরুরী অবস্থায় এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। হঠাৎ কারোর হার্ট-অ্যাটাক হলে, ইলেকট্রিক শক লাগলে বা কেউ জলে ডুবে গেলে ওই ব্যক্তিটি অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস স্তব্ধ হয়ে রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন সরাবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হলে মস্তিস্কের সক্রিয়তা লোপ পায়। ফলে ওই ব্যক্তির কোমা-তে চলে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তখনই প্রয়োজন হয় এই জীবনদায়ী চিকিৎসা কৌশলটির। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এর কথা আমরা জানি। এর ফলে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে হৃদস্পন্দন  আর ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস থেমে যায়। তাই অক্সিজেনের অভাবে মস্তিস্ক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আসলে রক্ত চলাচল ছাড়া হৃদযন্ত্র প্রায় ৩০ মিনিট সচল থাকলেও মস্তিস্ক প্রায় ৬ মিনিট পরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কিছুক্ষণ পরে হৃদযন্ত্র স্বাভাবিক হলেও মস্তিস্কের স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভবনা অনেকাংশে কমে যায়। হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় থাকে না। এই জন্যই অতিসত্বর সি.পি.আর শুরু করতে হয়। সমগ্র পৃথিবীব্যাপি বহু মানুষকে এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

সি.পি.আর এর উদ্দেশ্য হলো মূলত দুটি।

প্রথমত, বুকের সংকোচন-প্রসারণের দ্বারা যে যন্ত্রের মাধ্যমে গোটা শরীরে রক্ত সঞ্চালন ফিরিয়ে আনা।

দ্বিতীয়ত, মুখের মাধ্যমে বায়ু প্রবেশ করিয়ে ফুসফুসকে সক্রিয় করে তোলা।

সি.পি.আর কৌশল:-

প্রথমে রোগীকে সমান মেঝেতে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে।তারপর আপনার যেকোনো একটি হাতের তালুর উঁচু অংশটি অসুস্থ ব্যক্তির  বুকের উপর রেখে অপর হাতটি ওই হাতের উপরে রাখুন। উপরের হাতের আঙ্গুলগুলি নিচের হাতের আঙ্গুলগুলির ফাঁকে ফাঁকে গলিয়ে দিয়ে মুঠো করে ধরুন।

ছবিটি দেখুন তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।

এইভাবে কনুই ভাঁজ না করে একটু সময় অন্তর ৩০ বার চাপ দিন। এমন ভাবে চাপ দিন যাতে বুক দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি নিচের দিকে নামে। এভাবে এক মিনিটে ১০০ বার চাপ দিতে হবে।



 একই সঙ্গে মুখে বায়ু প্রবেশ করাতে হবে। এর জন্য অসুস্থ ব্যক্তির থুতনি উঁচু করে মাথা একটু নিচের দিকে হেলিয়ে দিন। এরপর আপনার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তির নাক চিপে ধরে মুখে মুখ লাগিয়ে বায়ু এমনভাবে প্রবেশ করান যাতে বায়ু কোন ভাবে বাইরে বের না হতে পারে।এভাবে এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুবার করুন। পুরো প্রক্রিয়াটিতে ৩০ বার  বুকে চাপ দিন ও ২ বার করে মুখ দিয়ে বায়ু প্রবেশ করান। এইভাবে চালাতে থাকুন শ্বাস ফিরে পাওয়া পর্যন্ত বা চিকিৎসক আসা পর্যন্ত।


সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একার পক্ষে সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য ও ক্লান্তিকর। তাই হঠাৎ কাউকে অজ্ঞান বা অচেতন হতে দেখলে সি.পি.আর শুরু করার আগে কাউকে ডেকে নিন। মনে রাখতে হবে ডাক দিয়ে কাউকে না পাওয়া গেলেও সি.পি.আর অতি শীঘ্রই শুরু করতে হবে।


জরুরী বিষয়:-

     কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে-

                   রোগীকে বসে বিশ্রাম নিতে বলতে হবে ও শান্ত করতে হবে।

                   শরীরের সঙ্গে চেপে বসে থাকা পোশাক আলগা করে দিতে হবে।

                   বুকে ব্যথার জন্য রোগী যদি নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় কোন ঔষধ খায় তাহলে তার কাছ থেকে জেনে তা খেতে দিতে হবে। অন্যথায় কোন ঔষধ খাওয়ানো যাবে না।

                   অচেতন হলে সি.পি.আর শুরু করতে হবে।

     ১ থেকে ৮ বছর বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে

                   দুই হাতের বদলে যেকোনো একটি হাত দিয়ে বুকে চাপ দিতে হবে।

                   উপরে বর্ণিত নিয়মে সি.পি.আর শুরু করতে হবে।

     নবজাতক বা ১ থেকে ১২ মাস বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে

                   থুতনি উঁচু করে মাথা কখনোই নিচের দিকে হেলানো যাবে না।

                   বুকে চাপ দেওয়ার সময় যেকোনো হাতের দুটি আঙুল ব্যবহার করতে হবে



                   মুখ ও নাক দিয়ে অল্প অল্প বাতাস প্রবেশ করাতে হবে।

                   উপরে বর্ণিত নিয়মে সি.পি.আর শুরু করতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:-

                   বাড়িতে মুখের সাহায্য ছাড়া অন্য কোনওভাবে বাতাস প্রবেশ করানো যাবেনা।

                   যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।


কোন মন্তব্য নেই

If you have any question, Please let us Know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.