লাল চোখ সতর্কতা
আমরা তাপ থেকে বাঁচলাম এবং এখন বর্ষার সময়। বৃষ্টি সবসময় সবার মধ্যে আনন্দ বের করে আনে। সেই বৃষ্টির ফোঁটা শুনলে কানে আসে এক মনোরম সঙ্গীত। এই সব মজার এবং উল্লাসে আমরা আমাদের চোখের জন্য বোঝানো যত্ন উপেক্ষা করার ঝোঁক. আমরা আমাদের হাত এবং পায়ের যত্ন নেওয়া নিশ্চিত করি কিন্তু আমাদের চোখ মিস করি।
চোখের যত্ন বর্ষাকালে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকালে আমরা যে চোখের সমস্যার সম্মুখীন হই তার মধ্যে কয়েকটি হল কনজাংটিভাইটিস, আই স্টিই, শুকনো চোখ, এবং কর্নিয়াল আলসার ইত্যাদি। এখানে আমরা এই চোখের সমস্যাগুলি এবং কীভাবে নিরাপদ বর্ষা কাটাতে পারি সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
কনজেক্টিভাইটিস: কনজেক্টিভাইটিস (পিঙ্ক আই) হল কনজাংটিভা (কনজাংটিভা হল স্বচ্ছ ঝিল্লি যা আপনার চোখের পাতার ভিতরের সাথে সাথে আপনার চোখের বাইরের পৃষ্ঠকে ঢেকে রাখে)। এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কিছু বিরক্তিকর পদার্থ দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং একজন থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে
। বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বৃষ্টির সময় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। কনজেক্টিভাইটিসের সাধারণ লক্ষণ হল চোখ লাল হওয়া, ফোলাভাব, চোখ থেকে হলুদ আঠালো স্রাব, চোখে চুলকানি, ব্যথার সাথে যুক্ত। এটি একটি সহজে নিরাময়যোগ্য চোখের সমস্যা। একজন পেশাদার চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
স্টাই: স্টাই হল একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা আপনার চোখের পাতার গোড়ার কাছে এক বা একাধিক ছোট গ্রন্থি জড়িত। চোখের Stye চোখের পাতার উপর একটি পিণ্ড হিসাবে ঘটে। বর্ষাকালে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে আই স্টিই খুব সাধারণ। গ্রন্থিগুলি আটকে যায় যার কারণে ব্যাকটেরিয়াগুলি সেই ছোট জায়গায় সংখ্যাবৃদ্ধি করে যা যাওয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টির কারণে; চোখের ধূলিকণা এবং অন্যান্য পদার্থগুলি এই গ্রন্থিগুলিতে আটকে যেতে পারে যা এটি ব্যাকটেরিয়াগুলির জন্য খুব ভাল নিডাস করে তোলে। Stye-এর প্রাথমিক উপসর্গগুলি হল পুঁজ নিঃসরণ, চোখের ঢাকনা লাল হয়ে যাওয়া, অসহ্য ব্যথা এবং চোখে আঁচড়।
শুকনো চোখ: অশ্রু হল ফ্যাটি তেল, জল প্রোটিন এবং ইলেক্ট্রোলাইটের একটি জটিল মিশ্রণ। চোখের পৃষ্ঠটি সাধারণত অশ্রু দ্বারা পুষ্ট, সুরক্ষিত এবং লুব্রিকেটেড হয়। শুষ্ক চোখে আপনার চোখ পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রদান করতে সক্ষম হয় না হয় দুর্বল মানের বা অপর্যাপ্ত কান্নার কারণে। এগুলো ধুলাবালি ও দূষক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে আবার বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়। তাই আপনি যদি ভ্রমণ করেন তবে একটি প্রতিরক্ষামূলক চশমা পরা নিশ্চিত করুন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ কিছু চোখের ড্রপ লিখে দেবেন যা আপনার চোখকে লুব্রিকেট করতে এবং তাদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
কর্নিয়াল আলসার: কর্নিয়ার আলসার হল কর্নিয়ার উপরিভাগে একটি ক্ষত যা আপনার চোখের সামনের পৃষ্ঠের উপরে থাকা স্বচ্ছ কাঠামো। কর্নিয়াল আলসার সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণের কারণে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে বাতাসের আর্দ্রতা ভাইরাসের বৃদ্ধি ও সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য অনুকূল অবস্থা তৈরি করে। কর্নিয়াল আলসার একটি বেদনাদায়ক, লাল চোখ, হালকা থেকে গুরুতর চোখের স্রাব এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস সহ ঘটে। জটিলতা এড়াতে এগুলি সময়মতো চিকিত্সা করা দরকার। আলসারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে; চিকিত্সা লাইন হয় শুধু ওষুধ এবং চোখের ড্রপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে অথবা চোখের অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
কীভাবে ছড়ায়
সাধারণত কন্টাক্টের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত জিনিস (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) অন্যরা ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়। আবার হ্যান্ড টু আই কন্টাক্টের (হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলে) মাধ্যমেও ছড়ায়। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয়।
সারতে কতদিন লাগে
সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
লক্ষণ
- চোখ লাল হয়ে যায়। সাধারণত প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই হয়
- চোখ দিয়ে জল পড়ে
- চোখে অস্বস্তিবোধ হয় (খচখচ করে)
- চোখের পাতা ফুলে যায়
- চোখে ব্যথা হয়
- আলো সহ্য হয় না
- চোখে পিচুটি (কেতুর) হয়
- চোখে হালকা জ্বালাপোড়া হয়
- ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা লেগে থাকে
- কারো চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত হলে তারা চোখে ঝাপসা দেখেন
চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও সতর্কতা
- সাধারণত এমনিতেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়
- প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে
- হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না
- রোগীকে কালো চশমা পরতে হবে
- ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে
- চোখ মোছার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে
- চোখ ওঠা রোগীদের আলাদা থাকতে হবে, যাতে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে
- অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তরা ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ নেন। কিন্তু এ জাতীয় ড্রপ বেশি দিলে চোখের জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন: গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কোনো ধরনের ড্রপ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত না। চিকিৎসকরা অবস্থা বুঝে নির্দিষ্ট কিছু রোগীকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ দিয়ে থাকেন
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
- কারো চোখের খচখচে ভাবটা যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে বা চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম
- শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে এ রোগের চিকিৎসা একই। তবে, শিশুরা যেহেতু মনের ভাব যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না, সেহেতু তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উত্তম
- অনেক সময় চোখ বেশি ফুলে যায় এবং কনজাংটিভায় জল জমে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
- খুব কমক্ষেত্রে এমন হয় যে, রোগীর চোখ দিয়ে রক্তও পড়ে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
- সাধারণভাবে চোখ লাল হলে ও সামান্য জল পড়লে ৭ দিন অপেক্ষা করাই ভালো। যদি এই সময়ে ভালো না হয়, তখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
Post a Comment