Adsence

সঠিক পেশা সঠিক জীবন

বর্তমান যুগে চাকরি করার বয়স ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সঠিক পেশা বাছার ব্যাপারটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে যেমন পড়ার মাঝখানে বিষয় পাল্টানোর ব্যাপারটা সহজেই অনুমতি পায়, আমাদের দেশে কিন্তু ব্যাপারটা অত সহজ নয়।


মা-বাবারা প্রাধনত জোর দেন সন্তানদের নিজেদের ধাঁচে গড়ে তোলার উপর। ফলে সন্তানদের থেকে এই সব মা-বাবারা ১০০ ভাগ পরিপূর্ণতা আশা করেন। সেই স্বপ্নপূরণে ব্যর্থ হলে তখন ঘনিয়ে আসে বিপদের কালো ছায়া। হাতাসা। এটা সন্তাদের একরকম পরিহার করা বৈকি।এর ফলে সন্তানরাও মনে করতে থাকে তাদের দ্বারা কিছু হবে না।

তাই অভিভাবকদের প্রতি আমাদের কিছু কথাঃ

১) সন্তানের বেছে নেওয়া পছন্দের পেশা উপেক্ষা করবেন না। সামাজিক স্বীকৃতির অভাবের দোহাই দিয়ে কখনও কখনও অপ্রথাসিদ্ধ পথে গিয়েও চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়া যায়।
২) সন্তানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিজেকে অতিমাত্রায় জড়ানো থেকে বিরত থাকুন। তা না হলে সন্তানের জীবনে আপনার ইতিবাচক প্রভাবকে আপনি নিজেই নষ্ট করে দেবেন।
৩) পেশা নিয়ে জোর করার আগে মনে রাখবেন সেই পেশার বিষয়ে আপনার পুরোমাত্রায় জ্ঞান আছে কি না। তা না হলে সন্তানকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার দায় কিন্তু আপনার উপর বর্তাবে।
৪) সন্তানকে প্রচলিত পেশাগুলি বেছে নেওয়ার জন্য অহেতুক জোর করবেন না। শুধুমাত্র উচ্চ উপার্জনের অমুলক আশায় এই ভুল করবেন না। এর ফলে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাফল্যের ইঁদুরদৌড়ে যোগ দিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৫) সন্তানকে তার সঠিক পথপ্রদর্শক খূঁজে পেতে সাহায্য করুন, যিনি তাকে সাফল্যের পথ দেখাতে পারবেন। তিনি আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী বা সন্তানের শিক্ষক যে কেউ হতে পারেন।
৬) সন্তানকে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে পরিচয় করান। দেখবেন এতে তাদের আগ্রহ তৈরি হবে। জ্ঞান বিকশিত হবে আর নিজেরাই পরবর্তী সময়ে তাদের বিচারবুদ্ধিকে প্রসারিত করতে পারবে।
৭) সন্তানকে উৎসাহিত করুন তার নিজের গোষ্ঠী তৈরি করার জন্য, যার মধ্যে সে সহজে বিচরণ করতে পারে। আপনি যেমন আপনার মতন মানসিকতার আর পাঁচজন লোকের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন, আপনার সন্তানকেও তার মনত আরও কিছু বন্ধদের সঙ্গে সময় কাটাতে উৎসাহ দিন যাতে তার মন উন্মুক্ত হতে পারে।
৮) প্রতিটি মানুষের একটা কমফর্টজোন বা আরামপ্রদ জায়গা বা বৃত্ত থাকে যার বাইরে সে সচরাচর বেরোতে চায় না। সন্তাককে উৎসাহিত করুন যাতে সে সেই সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বিচরণ না করে তার বাইরে বেরিয়ে এসে জগৎটাকে দেখে। তবেই তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা সম্ভবনা জেগে উঠে বিকশিত হবে।
৯) সন্তান যদি দেখে যে আপনি আপনার কাজের জগতে খুশি ও পরিতৃপ্ত, তাহলে আপনার দেখাদেখি সেও শিখবে নিজের কাজের জগতে কীভাবে নিজেকে খুশি রাখা যায়। অতএব, তার সামনে উদাহরণ স্থাপনের গুরুভার আপনার।
১০) সব শেষে, আপনার সন্তান কিন্তু মোটেই আপনার নতুন সংস্করণ নয়। সে সম্পূর্ণ আলাদা একটি মানুষ যার নিজের সত্তা আছে, আছে চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্খা। তাই যে কাজটির নামে আপনার গায়ে জ্বর আসে, সেই একই কাজ করে সে হয়তো পরম পরিতৃ্প্তি পায়। তার স্বাতন্ত্রতাকে গুরুত্ব দিন আর তাকে নিজের মতো বড় হতে দিন।

পরিশেষ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য

ভারতে পেশা বাছাটা অনেকটা বিয়ে করার মতো, এখানে পারিবারিক সম্মতি একটি অলিখিত নিয়ম।আমাদের দেশে মর্যাদাপূর্ণ পেশাগুলির মধ্যে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং আজও জলপ্রিয়তার শীর্ষে, তাই নিজের পছন্দ মতন পেশা নিতে গেলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে সম্মতি আদায় করতে হয়, তবে অনুমতি আদায় কিন্তু অনেক কঠিন, এই বিপরীত ধারার কাজগুলি করার জন্য।তাই অভিভাবকদের তোমাদের মতন করে ভাবতে শেখাও, সেই সব লোকেদের উদাহরণ দাও যারা এই পেশায় সাফল্য অর্জন করেছে।মনে রেখো তোমাদের পেশা নির্বাচনের পরিকল্পনায় যেন কোনও খামতি না থাকে, যাতে তোমাদের পরিকল্পনা দেখে অভিভাবকরা সম্পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করতে পারেন। সব থেকে আগে নিজেকে বোঝাও কেন তুমি একটা নির্দিষ্ট কাজকে তোমার পেশা বানাতে চাও। নিজেকে যদি বিশ্বাস করাতে পারো, তবে গোটা দুনিয়াকে বোঝাতে তোমার কোন অসুবিধা হবে না। তবে এর সাথে বিকল্প কিছু ভেবে রাখা দরকার যাতে কোনো কারণে যদি পূর্বপরিকল্পনা মত এগোতে না পারো, তাই এই বিকল্প পরিকল্পনাই পরবর্তীকালে তোমাকে বিষণ্নতার হাত থেকে বাঁচাবে।

কোন মন্তব্য নেই

If you have any question, Please let us Know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.