অঙ্গের অঙ্গীকার অঙ্গদান
নবজন্ম মিলতে পারে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে। এর জন্যে চাই অঙ্গদানের সদিচ্ছা এবং তার সফল বাস্তবায়ন।
কাকে বলে অঙ্গদান
অঙ্গদান শব্দটার আক্ষরিক অর্থ, প্রতিস্থাপনের
উদ্দেশ্যে কোন মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ অঙ্গ কেটে কোনও অসুস্থ মানুষকে নতুন জীবনদান৷
যে ব্যক্তির শরীর থেকে অঙ্গ নেওয়া হয়, তাঁকে ‘অঙ্গদাতা’বা ‘ডোনার’ বলা হয়৷ আর যাঁর
শরীরে সেই অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হচ্ছে, তাঁকে বলা হয় ‘গ্রহীতা’ বা ‘রেসিপিয়েন্ট’৷
কারা হতে পারেন অঙ্গদাতা
যে কেউ অঙ্গদান করতে পারেন৷ কারও বয়স, ধর্ম, জাত, সম্প্রদায়
এবং অসুস্থতা (বর্তমান কিংবা পুরোনো) অঙ্গদান করার ক্ষেত্রে বাধা হয় না৷ এমনকি শিশুরাও
অঙ্গদান করতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে শিশুদের অভিভাবকের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন৷ বিশেষজ্ঞদের
মতে, ‘ডোনার’ অসুস্থ হলে বিশেষ বিশেষ কয়েকটি রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে কড়া নজরদারি চালাতে
হবে৷ ক্যান্সার, হেপাটাইটিস আক্রান্ত, এইডস (এইচআইভি পজিটিভ) রোগী কিংবা নেশাগ্রস্ত
ব্যক্তি হলে অঙ্গদান করাটা ঠিক নয়৷ কিন্ত্ত ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের চোখের কর্নিয়া
দান করতে বাধা নেই৷
কোন কোন অঙ্গদান করা সম্ভব
বর্তমানে চিকিত্সা বিজ্ঞানে উন্নতির ফলে মানুষের শরীর
থেকে কমপক্ষে ১২ রকমের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব৷ মূল অঙ্গের মধ্যে ফুসফুস, হূদযন্ত্র,
কিডনি, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃত্ (লিভার) প্রতিস্থাপন করা সম্ভব৷ কোনও ব্যক্তির
মৃত্যুর তিন ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্ত অঙ্গ কেটে নেওয়া হলে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব৷ এ ছাড়া
কোনও ব্যক্তির যদি ‘ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়ে যায়, তা হলেও এই সমস্ত অঙ্গ
প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব৷ পাশাপাশি সম্ভব মানুষের মৃত্যুর তিন ঘণ্টার মধ্যে শরীরের বেশ
কিছু অংশের ‘টিস্যু’ বা তন্ত্ত প্রতিস্থাপনও৷ যেমন, চোখের কর্নিয়া, ত্বক, হূদযন্ত্রের
কপাটিকা (ভালভ), হাড়, শিরা৷
অঙ্গদান কত ধরনের
হয়
অঙ্গদান মূলত তিন প্রকারের৷ লাইভ রিলেটেড ডোনেশন: এ ক্ষেত্রে
জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়৷ অঙ্গদাতা পরিবারের সদস্য
কিংবা দূরসম্পর্কের আত্মীয় হতে পারেন৷ লাইভ আনরিলেটেড ডোনেশন: এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মানবিকতার খাতিরে পরিবারের সদস্য নন, এমন কোনও
ব্যক্তিও অঙ্গদান করতে পারেন৷ অঙ্গদাতা ব্যক্তির সঙ্গে গ্রহীতার আত্মীয়তা না থাকলেও,
পারিবারিক যোগাযোগ বা ন্যূনতম যোগাযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়৷ ডিজিসড/ক্যাডাভার
অর্গান ডোনেশন: এ
ক্ষেত্রে কোনও মৃত বা ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তির শরীর থেকে প্রয়োজনীয় অঙ্গ কেটে অসুস্থ ব্যক্তির
শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়৷
‘ডোনার রেজিস্ট্রি’র গুরুত্ব
‘ডোনার রেজিস্ট্রি’ হচ্ছে এমন এক তথ্যভাণ্ডার যেখানে
অঙ্গদানে উত্সাহী ব্যক্তিদের নাম নথিভুক্ত থাকবে৷ কোনও হাসপাতালে ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তি
থাকলে, সেই রেজিস্ট্রি দেখে চিকিত্সকরা সহজেই স্থির করতে পারবেন, ওই ব্যক্তি অঙ্গদান
করতে ইচ্ছুক কি না৷ রেজিস্ট্রিতে রোগীর নাম থাকলে হাসপাতাল তত্ক্ষণাত্ পরিবারের সঙ্গে
যোগাযোগ করতে পারবে৷ আমেরিকা এবং কানাডার মতো উন্নত দেশে এই ধরনের ‘ডোনার রেজিস্ট্রি’
রয়েছে অনেক বছর ধরে৷ সেখানকার ‘রেজিস্ট্রি’তে শুধুমাত্র ইচ্ছুক অঙ্গদাতাদের নামের তালিকা
থাকে না৷ সেখানে এমন ব্যক্তিদের তথ্যও থাকে, যাঁদের প্রাণ বাঁচাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন
করাটা অত্যন্ত জরুরি৷ সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাসপাতালের দাতা এবং গ্রহীতাদের মধ্যে যোগাযোগ
করতে অসুবিধে হয় না৷
আমাদের দেশেও এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কোনও
যদি মরণোত্তর অঙ্গদান করতে চান, তা
হলে তাঁকে নোটো (NOTTO) নামে এক জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নিজের নাম নথিভূক্ত করাতে হবে। এই
প্রতিষ্ঠানের আবেদনের ভিত্তিতেই ঠিক হয় অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তালিকায় কে আগে থাকবেন।
যিনি প্রথমে আবেদন করবেন, সর্বোপরি তিনিই এই সুবিধা সবার আগে পাবেন।
নিচের লিংকে ক্লিক করে নোটো (NOTTO) তে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন।
কি ভাবে করবেন নোটো (NOTTO) তে নাম নথিভুক্ত একবার দেখে নিন।
প্রথমে নোটো সাইট খুলে রেজিস্ট্রান ফর প্লেড্জ ক্লিক করুন
আধার নম্বর বা ফোন নম্বর দিন।
ওটিপি ভেরিফিকেশ করুন।আধার নাম্বার হলে আধার ওটিপি ভেরিফিকেশন করুন।
সমস্থ সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্মটি ফিলাপ করুন।
এবার কোন কোন অঙ্গ দান করবেন ভেবে সেই সব অঙ্গ টিক মার্ক করুন। ফিলাপ হবার পর রেজিস্ট্রারে ক্লিক করুন।
কনর্ফাম করুন।
করর্ফাম করলে আপনার নাম রেজিস্ট্রার হয়ে যাবে। পরে আপনি আপনার নাম তুলে নিতে পারেন। তবে আগে পরিবারের সাথে কথা বলে নেবেন। পরে যদি পরিবার মেনে না নেয় সে ক্ষেত্রে আপনি নাম এডিট অপশনে গিয়ে উইত ড্র বা নাম তুলে নিতে পারেন।
সব ঠিকঠাক থাকলে আপনার দেয়া মোবাইল নম্বরে এই এসএমএসটি আসবে।
আপনাকে এই রকম একটি অঙ্গদানের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
কী ভাবে অঙ্গদানের অঙ্গীকার করব
অঙ্গদানের আগে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা উচিত৷ অঙ্গদান
সম্পর্কে যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন৷ পরিবারের সঙ্গে আগে আলোচনা করে অঙ্গদানের ব্যাপারে
সিদ্ধান্ত নিন৷ আপনার পরিবার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত থাকলে তবেই ডাক্তাররা
এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে পারবেন৷ ১৮ বছরের আগে অঙ্গদান করতে চাইলে বাবা-মায়ের সম্মতি
নেওয়া বাধ্যতামূলক৷
Post a Comment