Adsence

কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হলে কী ভাবে আইনি সাহায্য পাবেন নারীরা? হেনস্থার আওতায় কী কী পড়ে?


ঘটনা ১

একটি সরকারি বিএড কলেজ। শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে চাওয়া এক তরুণীকে বাড়িতে ডেকে পাঠালেন পছন্দের ‘শিক্ষক’। ছবি দেখাবেন বলে। সরল বিশ্বাসেই তিনি গেলেন শিক্ষকের বাড়ি। ফিরলেন ধর্ষিতা হয়ে!

ঘটনা ২

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সদ্য চাকরি পাওয়া এক তরুণীর কাছে এল শীর্ষ পদাধিকারীর ফোন। বক্তব্য, ওই কর্মী যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন, সাহায্য করবেন। পরে সেই ফোনালাপেই আসে যৌন ইঙ্গিত।

ঘটনা ৩

এ ঘটনাও এক কলেজের। এক শিক্ষক তাঁর সহকর্মী শিক্ষিকাকে দেখলেই নানা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন। ছাত্রছাত্রীদের সামনেই বলেন, ‘‘আপনার সাজপোশাক তো দারুণ উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।’’ 



 কেউ প্রকাশ্যে, কেউ বা আড়ালে থেকে জানিয়েছেন কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন, যৌন হেনস্থার কথা। কিন্তু তাঁরা কেউই আগে সে ভাবে অভিযোগ জানানোর সাহস পাননি। কেউ ভয়ে, কেউ বা আইন না জানার কারণে। ঠিক কখন কোনও ঘটনাকে যৌন হেনস্থার পর্যায়ে ফেলা যায়? কত দিনের মধ্যে মুখ না খুললে অভিযোগ গ্রাহ্য না-ও হতে পারে? সবই বলা আছে ভারত সরকারের ২০১৩ সালে প্রণীত কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার আইনে। এই আইনের নাম সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অফ উওম্যান অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রহিবিশন অ্যান্ড রিড্রেসাল) অ্যাক্ট ২০১৩। এই আইনের ৯ নম্বর ধারার প্রথম এবং দ্বিতীয় উপধারা বা সাবসেকশনের অধীনে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে। কী ভাবে আইনের সাহায্য পেতে পারেন মহিলারা?

উপরে যে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রেই যথাসময়ে মুখ খুলতে পারেননি নির্যাতিতারা।  তিন জনই হয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান না হলে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার শিকার। এখন অন্যদের কাছে নিজেদের পরিস্থিতির কথা জানালেও সে ভাবে আইনের দ্বারস্থ হননি তাঁদের কেউই। তবে এমন অভিজ্ঞতা হলে মহিলারা আইনের সাহায্য নিতে পারেন। তার জন্য জানা জরুরি, কোন কোন ঘটনাকে হেনস্থা বলে চিহ্নিত করা আছে আমাদের দেশের আইনে।



কোন কোন বিষয়কে যৌন হেনস্থা বলা যায়?

১. শারীরিক স্পর্শ বা ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা
২. যৌন ‘অনুগ্রহ’ পাওয়ার অনুরোধ বা দাবি
৩. যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য
৪. পর্নোগ্রাফি বা নগ্নতার প্রদর্শন
৫. যে কোনও ধরনের অযাচিত যৌন আচরণ। তা মৌখিক হতে পারে, শারীরিকও হতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিস্থিতির কথা আলাদা করে উল্লেখ করা আছে আইনে?

১. কোনও সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত বা সরাসরি সে সংক্রান্ত প্রলোভন দেখানো
২. ইঙ্গিতে বা সরাসরি যৌন সংসর্গে রাজি না হলে দুর্ব্যবহারের হুমকি
৩. ইঙ্গিতে বা সরাসরি কর্মজীবনে ক্ষতিসাধনের হুমকি
৪. ইঙ্গিতে বা সরাসরি কাজ করার প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করা
৫. প্রকাশ্যে অপমানজনক মন্তব্য করা, যা অভিযোগকারিণীর নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক

এমন ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে এক জন মহিলা প্রথমে কী করবেন?

কর্মক্ষেত্রে বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হলে প্রথমেই বিষয়টি জানাতে হবে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। আইন অনুযায়ী ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনাল কমপ্লেন্ট কমিটি বা আইসিসি থাকা জরুরি। সেখানেই প্রথমে অভিযোগ জানাতে হবে। কারণ, তাঁদের না জানিয়ে এ বিষয়ে বাইরে অভিযোগ করলে, সংস্থা অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করতে পারে।

শুধু তা-ই নয়, অভিযোগের কথা জানাতেও হবে ঘটনা ঘটার তিন মাসের মধ্যে, ওই সময়ের মধ্যে অভিযোগ না জানালে প্রতিষ্ঠানের আইসিসি চাইলে সেই অভিযোগ খারিজ করতে পারে। যদি তারা মনে করে, একমাত্র তা হলেই ওই সময়সীমার পরেও অভিযোগ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা-ও বড়জোর তিন মাস। এক জন নির্যাতিতার পক্ষে তাঁর প্রতি হওয়া নির্যাতনের কথা প্রকাশ্যে বলার জন্য ওই সময়সীমা ‘যথেষ্ট কম’ বলেই মনে করেন অনেক আইনজীবী। তবে সম্প্রতি সংসদে একটি বিল পেশ করা হয়েছে। সেই বিলে ওই তিন মাস সময়কে বাড়িয়ে এক বছর করার প্রস্তাব রয়েছে। এমনকি, ইন্টারনাল কমিটির সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকটা। তারা চাইলে যত দিন খুশি অভিযোগ গ্রহণের সময়সীমা বিস্তার করতে পারে। তবে এই বিল এখনও আইন হয়নি।

সে ক্ষেত্রে যদি কোনও মহিলা তাঁর কর্মক্ষেত্রে বা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যায় পড়েন এবং তিন মাসের মধ্যে জানাতে না পারেন, তবে কি তিনি সুবিচার পাবেন না ? তিনি নিয়ম মেনে প্রথমে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই জানাবেন। যদি তাঁরা কোনও পদক্ষেপ না করেন, তবে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন। পুলিশে কাছেও সুরাহা না হলে তিনি আদালতে এ ব্যাপারে আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হবে তাঁর অভিযোগের।

ভারতে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধের যে আইন রয়েছে, তার নাম কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ আইন ২০১৩। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওই ধরনের ঘটনার জন্য ওই আইন ছাড়াও রয়েছে ইউজিসি (যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ) বিধি ২০১৫। এই আইন বলছে, কর্মক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই আইনে অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, এই আইনের বিষয়ে কর্মীদের অবগত রাখাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।











কোন মন্তব্য নেই

If you have any question, Please let us Know

Blogger দ্বারা পরিচালিত.