চল্লিশ পেরোলে মহিলারা কিডনির রোগে বেশি ভোগেন কেন?
অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ আর ডায়াবিটিস মহিলাদেরও বড় সমস্যা। অনেক সময় প্রেশার ও সুগার থাকা সত্ত্বেও রোগী নিজেই জানেন না যে, তাঁর এমন অসুখ রয়েছে। যখন ধরা পড়ে, তখন কিডনি-সহ অন্যান্য অঙ্গ বিকল হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে মহিলারা অত্যন্ত অসুস্থ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। আর এই কারণেই কিডনির রোগের প্রকোপ বাড়ছে। লুপাস নেফ্রাইটিস নামে এক ধরনের অটোইমিউন ডিজ়িজ় এবং মূত্রনালির সংক্রমণ মেয়েদেরই বেশি হয়। আর এর থেকেই ক্রনিক কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
রোজের কোন পাঁচ অভ্যাস কিডনি বিকল করে দিতে পারে?
জল কম খাওয়া
মহিলারা অনেক সময় বাড়ির কাজ বা বাইরে যাতায়াতের সময় শৌচাগার ব্যবহারের অসুবিধার কথা ভেবে জল কম খান। দীর্ঘ সময় শরীরে জলের ঘাটতি হলে কিডনি আর বর্জ্য পদার্থ বা টক্সিন বার করে দিতে পারে না। ফলে কিডনিতে সংক্রমণ ও পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে।
ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া
ব্যথা হল, কি হল না, ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ফেলার অভ্যাস কিডনির রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। চল্লিশ পার হলে হরমোনের তারতম্যের কারণে হাঁটু, কোমরের ব্যথা এমনিতেই বেশি ভোগায়। ওই সময়ে রোজ রোজ ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ফেলার অভ্যাস পরবর্তীতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই ওষুধগুলি কিডনিতে রক্ত চলাচলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
প্রস্রাব চেপে রাখা
মানবদেহে যে আকারের মূত্রথলি রয়েছে, তার ধারণক্ষমতা খুবই কম। প্রায় ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত মূত্র ধারণ করার ক্ষমতা মূত্রথলির রয়েছে। তবে কেউ যদি দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব ত্যাগ না করে তা চেপে রাখেন, সে ক্ষেত্রে মূত্রাশয়ের পেশি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রনালি এবং মূত্রথলিতে সংক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাস্তাঘাটে সাধারণ শৌচালয় ব্যবহার করা নিয়ে বহু মহিলারই আপত্তি রয়েছে। প্রস্রাব চেপে রাখতেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ফলে মূত্রথলির মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া সংখ্যায় দ্বিগুণ গতিতে বাড়তে থাকে। মূত্রথলি, মূত্রনালি হয়ে সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগে না।
কাঁচা নুন খাওয়ার অভ্যাস
পাতে কাঁচা নুন খাওয়ার অভ্যাস অনেক মহিলারই আছে। অতিরিক্ত সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলির ক্ষতি করে।
চিনি ও মিষ্টির প্রতি আসক্তি
চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, মিষ্টি পানীয় কেবল ওজন বৃদ্ধি করে তা নয়। কিডনিরও ক্ষতি করে। চল্লিশের পর মহিলাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হয়ে গেলে তা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে। ফলে কিডনির কোষগুলি নষ্ট হতে থাকে।
কিডনি সুস্থ রাখতে কী করবেন?
কিডনির অসুখ হচ্ছে তা বোঝা যাবে কিছু লক্ষণে। রাতে বার বার প্রস্রাবের বেগ আসবে, ক্লান্তি বাড়বে, খিদে কমে যাবে, সারা ক্ষণ বমি ভাব থাকবে, রক্তচাপ ওঠানামা করবে। এই লক্ষণগুলি চিনে সতর্ক হতে হবে।
কিডনি ভাল রাখতে দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতে হবে। তবে অন্য অসুখ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জল মেপে খেতে হবে।
মিষ্টি জাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত ফলের রস না খাওয়াই ভাল।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তার জন্য রোজ অন্তত ২০ মিনিট করেও শরীরচর্চা করা জরুরি।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। অনেক মহিলাই পেশাগত কাজের জন্য বা সংসারের দায়দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাতে কম ঘুমোন। এতে কিডনির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
বছরে অন্তত একবার ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিন অ্যালবুমিন পরীক্ষা করানো জরুরি।

Post a Comment